সুন্দরবন থেকে ফিরে এসেছি তা প্রায় দেড় বছর মতো হবে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্বগুলো গড়ে উঠেছে। কোচবিহার থেকে এসে কলকাতা কে চিনতে শিখেছি। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে প্যারামাউনট সব ই সড়-গর হয়ে উঠছে। আর প্রেসিডেন্সি কে নিত্য রুপান্তরিত হতে দেখছি। আমরা এমন একটা সময় প্রেসিডেন্সিতে ছিলাম যে সময়টা হল কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি হবার সন্ধিক্ষণ। পুরনো টিচার কে বি স্যার, টি কেক এম স্যার রা আস্তে আস্তে চলে গেলেন। এলেন অনেক নতুন নতুন প্রফেসর। প্রেসিডেন্সি আস্তে আস্তে কিরকম চেনা একটা পরিবার থেকে একটা প্রফেসনাল ইন্সিটিউটের মত হয়ে গেল। হয়ত সেটা হবার দরকার ও ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য সময় টা কম কঠিন ছিল না। এমন ই একটা সময়ে এসে উপস্থিত হল আমাদের এক্সকারসন। নাহ্! এবার আর আগের বারের মত ঘোরার ছলে নয়, রিতিমতো মারক্স-টারক্স নিয়ে ফাইনাল ইয়ারের এক্সকারসন। আর ফিরে এসেই এন্ডসেম। কিন্তু এতজন মিলে যখন বাইরে কোথাও যাবো সেম্-টেম্ এর কথা কি আর মাথায় থাকে? থাকা টা উচিতো না। যা হোক, মোটামুটি ২০১৪-এর পুজোর আগে আগে জানলাম আমরা যাচ্ছি ভিতরকনিকা। আমাদের এতদিনের সব দশ-পনেরো দিনের দূর-যাত্রার থিয়োরি কে নহ্শাত করে দিয়ে ভিতরকনিকা? তাও মাত্র পাঁচ দিনের? মন টা বেশ খারাপ ই হল সবার। আর সুন্দরবনে যাওয়া আমাদের মত লোকেদের তো আরোই শোচনীয় অবস্থা। আবার ম্যানগ্রোভ?? কিন্তু সেসময় যেটা বুঝতে পারিনি তা হলো মুহূর্ত গুলোই আমাদের স্মৃতি তে থেকে যায়। দিন সংখ্যা বা জায়গা কোনোটাই সেখানে খুব একটা ম্যাটার করে না।
সময় টা নভেম্বর। এবারের গ্রঊপ টা অনেক বেশী ভারি। তাই উত্তেজনা টাও অনেকাংশে বেশী। সদ্য দুর্গা পুজো শেষ হয়েছে। এবারের গ্রউপে আমরা কারা আছি প্রথমেই নামগুলো বলে নেওয়া দরকার। ঐশী, এশা, অরু, অন্তিমা, মেখলা, অভিপ্সা, রাজ্যশ্রী, প্রিয়াঙ্কা, অদিতি, দ্বৈপায়ন, শেখর, বিপ্লব, আবির, অর্ণব, অরুনাভ, সঞ্জয় নিয়ে আমরা মোট সতেরো জন। সাথে এম্ এস্ সির দাদা দিদি দের একটা ব্যাচ। সব নিয়ে ৩০-৩৫ জনের একটা দল। সাথে আছেন কে পি স্যার, পূজা ম্যাম আর কাশী দা। টুর অরগানাইস করলেও শেষ মুহূর্তে একটা অ্যাকসিডেনটের কারণে আমাদের সাথে যেতে পারেন নি এস এম স্যার। আমরা সবাই বেশ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে ফেলেছি। দিন গোনাও শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বাধ সাধল আমার যাওয়া। বাবার একটা ছোট সার্জারি তে ভুলের জন্য আই সি ইউ তে ভর্তি করতে হয়। সেই দিন টার কথা ভাবলে আজও মনে হয় আমার যাওয়াটা বোধ হয় ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু মা একরকম জোড় করেই সেবার আমায় পাঠিয়েছিল।
৩রা নভেম্বর
ট্রেন রাত সাড়ে ১১টায়। অমরাবতী এক্সপ্রেস। একটা গাড়ি ভাড়া করা ছিল। গাড়ি নিয়ে বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়লাম আমি, মা আর আমার এক মাসি। প্রথম গন্তব্য ই-ই-ডি-এফ্। ভিসিটিং আওয়ার ৫টা থেকে ৭টা। বাবাকে দেখে রাত ৮টার দিকে বেড়িয়ে পড়লাম হাওড়ার উদ্যেশ্যে। সেদিনও মা আমাকে একা ছাড়েনি। স্টেশন অবধি পৌঁছে দিয়েছিল। নভেম্বর এর হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়ায় গাড়ি ছুটে চলেছে এ জে সি বোস ফ্লাইওভার দিয়ে। গাড়ি চালাচ্ছে প্রদীপ কাকু। স্টেশন পৌঁছে গেলাম নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই। তখন ও সম্ভবত কেউ আসেনি। দ্বৈপায়নকে ফোন করলাম। মিনিট পনেরো পর ও চলে এলো। তারপর একে একে সবাই আসতে শুরু করল।
ট্রেন রাইট টাইমেই ছিল। ট্রেনে উঠে মাল-পত্র জায়গায় রেখে ছোট-খাটো একটা আড্ডা মতো হল। তবে সেবারের খুব একটা আড্ডার কথা আমার মনে নেই। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১২ টা- ১ টা হবে। মাঝ রাতে আবার সবাইকে উঠতে হবে। তাই তাড়াতাড়িই সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
৪ঠা নভেম্বর
মাঝরাত। সাড়ে-তিনটে চারটে হবে। ট্রেন পৌঁছল ভদ্রক। মনে আছে সবাই কিরকম একটা ঘোরের মধ্যে পিঠে রাক্স্যাক নিয়ে লাইন করে ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্ম থেকে বেড়িয়ে বেশ কিছু টা হেঁটে একটা বাসে গিয়ে উঠলাম। ট্রেন থেকে নেমে বাসে ওঠা অবধি অসম্ভব ঠাণ্ডার একটা অনুভুতি হয়েছিল এটুকু মনে আছে। বাসে উঠেই আবার ঘুম। ঘুম যখন ভাঙল ঘড়িতে সকাল ৬টা।
 |
ভিতরকনিকায় আমাদের তিনটে ডেসটিনেশন |
এবারেও বাঁদিকের একটা জানলায় আমি বসে আছি। আমার পাশে ঐশী। ও জেগেই ছিল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতে দেখলাম সমস্ত দৃশ্যপট টাই যেন এক মুহূর্তে পালটে গেছে। আসলে ঘুমের ঘোরে কখন যে এতটা পথ চলে এসেছি তার ঠাহর করতে পারিনি। বাইরেটায় যতদূর দেখা যায় সবুজ মাঠ। আর তাতে জমেছে ভোরের শিশির। জানলা টাও ঠাণ্ডায় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মাটির রাস্তা। বাস চলছে চরাই-উতরাই বেয়ে। সকাল ৭ টা। বাস অবশেষে থামল। যে জায়গাটায় আমরা নামলাম তার নাম টা আমার খুব পছন্দের। চাঁদবালি। নভেম্বরের সকাল। চারপাশে শিশির ছড়িয়ে। হাল্কা একটা ঠাণ্ডা হাওয়া আমাদের সবাইকে যেন জড়িয়ে আছে। যেদিকেই দেখি দিগিন্ত-বিস্তৃত সবুজ মাঠ। চারপাশে আর অন্য কোনও শব্দ নেই। শুধুই পাখির আওয়াজ। আমাদের থাকার জায়গাটার মাঝে বেশ অনেক টা ফাঁকা মত জায়গা। আর চারপাশ টা ঘিরে ছোট ছোট কটেজ। রুম অ্যালটমেনট হল। একটা ঘরে আমি, অর্ণব, অরুনাভ আর সঞ্জয়। পাশের ঘর টাতেই শেখর দের অ্যালটমেনট হল। দুটো ঘরের মাঝের দেওয়াল এতটাই পাতলা যে মোটামুটি যে যার ঘরে বসেই পাশের ঘরের লোকের সাথে অনায়াসে গল্প জুড়তে পাড়ে। তার যথেচ্ছ ব্যবহার আমরা যে করেছিলাম তা অবিশ্যি অস্বীকার করার জায়গা নেই।
আমাদের ঘর টার একটু বিবরণ দেওয়া দরকার। বাথরুমে যে বেসিন টা ছিল তার পাইপ ভাঙ্গা। বাথরুম টার ও যারপরনাই খারাপ অবস্থা। লোক এলো ঠিক করতে। আমি স্নান সারতে কাশী দার ঘরে চলে গেলাম। আমাদের ঘরের খাট টাও ছিল দেখার মত। মোটামুটি একটা দশ বাই দশ ঘরের গোটা টা জুড়েই একটা খাট। অনায়াসে পাঁচ জন শুতে পাড়ে। সেখানে আমরা মোটে চারজন। যা হোক, স্নান-টান সেরে মাঝের সেই বসবার জায়গাটায় এসে জড়ো হলাম সবাই। গ্রউপ-ওয়াইস পিট্ফল ট্র্যাপ প্লেস্ করে সকালের জল-খাবার খেয়ে যে যার মতো উঠে পড়লাম লঞ্চে। এই জায়গায় সুন্দরবনের সাথে গল্পে খুব একটা ফারাক নেই। দুটো লঞ্চ। একটায় আমরা। আর একটায় এম্ এস্ সির দাদা-দিদিরা। ডেক এর ওপর সবাই বেশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসলাম। লঞ্চ চলল বৈতরণী নদী বেয়ে ভিতরকনিকা ন্যাশনাল পার্কের ভেতর। দুপাশে ঘন ম্যানগ্রোভ এর জঙ্গল।
 |
প্রথম দিন চাঁদবালিতে পিটফল পাতা হচ্ছে |
ভিতরকনিকা ন্যাশনাল পার্ক মোটামুটি ১৪৫ বর্গ-কিমি জুড়ে ভিতরকনিকা ওয়াইল্ড-লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি এর কোর এরিয়ায় অবস্থিত। মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সবটাই বাফার জোন এ। সুন্দরবন যদি বাঘ দেখার আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে থাকে তবে ভিতরকনিকা "রামসার সাইট" বিভিন্ন প্রজাতির কুমির এর জন্য পরিচিত। এসচ্যুরাইন ক্রোকোডাইল থেকে ঘরিয়াল, সঠিক পরিসঙ্খান না জানলেও কুমিরের ঘনত্বের দিক থেকে ভারতে তালিকায় প্রথমদিকেই রয়েছে এই ম্যানগ্রোভ।
আমাদের থাকার জায়গাটা সকালে একটু ঘুরে দেখেছিলাম। ল্যাপউইয়িং, পায়েড কিংফিশার থেকে প্রচুর সংখ্যায় লেপার্ড প্রজাপতির দেখা মিলেছিল। লেপার্ড যখন বললাম তখন টাইগার ই বা বাদ থাকে কেন। ভিতরকনিকাতেই প্রথম দেখেছিলাম হোয়াইট টাইগার প্রজাপতি। হোয়াইট বলাতে মনে পড়ল এই অঞ্চলে বেশ কিছু হোয়াইট বা অ্যালবিনো ক্রোকোডাইল রয়েছে। এখানকার লবনাক্ত কাঁদা মাটিতে মোটামুটি সব জায়গাতেই লাল, হলুদ, নীল বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়ার দেখা মেলে। দুপুরের দিকে আমরা কোথাও একটা ল্যান্ড এ নেমেছিলাম। কোন একটা মন্দির ছিল সেখানে। কিছুটা সময় কাটানোর পর ফের লঞ্চ-যাত্রা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। আমরা ফিরে এলাম চাঁদবালিতে।
 |
ভিতরকনিকায় প্রথম সাইটিংঃ পায়েড কিংফিশার |
 |
ম্যানগ্রোভ আর মাডস্কিপার সমার্থক |
 |
দ্বিপ্রাহরিক মন্দির দর্শন |
 |
গোপালের নাম ক্যামেরাবাবা |
 |
পথ-চলতি পোজঃ আবির, বিপ্লব, শেখর |
নভেম্বর এ সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি নামে বলে কিনা জানিনা আমরা একটু আগেই ফিরে এলাম থাকার জায়গায়। সময় তো নষ্ট করা চলবেনা। সাথে কে পি স্যার। ম্যাম-ও ছিলেন। ফিরে এসে যদ্দুর মনে হয় দু-তিন কিমি মতো পথ আমরা পায়ে হেঁটে ঘুরেছিলাম। যে জায়গাটায় আমাদের থাকা তাকে কেন্দ্র করে মোটামুটি একটা বৃত্তাকার পথে। অদিতির ছোটোবেলা ওড়িশায় কেটেছে বলে ওরিয়ায় লেখা যাবতীয় জিনিস আমরা ওকে পড়তে বলতাম। স্থানীয় লোকেদের সাথে যতটুকু যা কথা বলা হতো মাধ্যম ছিল ও ই। সন্ধ্যা তখন নেমে এসেছে। আমরা হেঁটে চলেছি গ্রামের আল্-পথ দিয়ে। এমনি সময় অনেক দূর থেকে কোন মন্ত্র বা কিছু একটা ভেসে আসছিল বারবার। সেটা নকল করে কতবার যে পড়ে আমরা (বিশেষ করে আমি) অদিতি কে খেপিয়েছি তার হিষেব নেই। ফিরে এসে স্নান সেরে যখন বাইরে এলাম চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। মাঝের সেই বসার জায়গাটায় কত আলো জ্বলে উঠেছে। কিন্তু দিনের সবথেকে বড় চমক টা যে তখনো আমাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে তা আমাদের জানা ছিল না কারোর ই। বেশ খানিক টা রাত হয়েছে তখন। এদিকে ডিনারের কোন আয়োজন নেই। ভাবতে ভাবতেই কে একজন বলল নৌকোয় চেপে বসতে। আমরা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। জানা গেল রাতের খাবারের আয়োজন সবটাই নদীর ওপারে। নৌকোয় উঠলাম। এতক্ষণ লক্ষ্য করিনি, আকাশে কি সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। সামনেই বুঝি পূর্ণিমা। নদী পেড়িয়ে রাতের খাওয়া হল। কিন্ত খাওয়াটা তখন খুব একটা বড় বিষয় নয়। তার থেকে অনেক বেশি উত্তেজনার বেপারটা হলো নৌকো করে আবার ফেরা হবে। এরকম একটা মুহূর্ত খুব কম-ই জীবনে আসে। চারপাশ জুড়ে রাত্তিরের অন্ধকার। কোনো কৃত্রিম আলো নেই কোথাও। আমরা একটা নৌকোয় কয়েকজন একটা নদী বেয়ে চলেছি। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে নদীর জল। আর আবছা কুয়াশার চাদরে দূরের অন্ধকার টাও যেন ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। শুধু জলের স্রোতের শব্দ কানে আছড়ে পড়ছে বারবার। কোনো কথা নেই, আশেপাশে কোথাও কোন শব্দ নেই। দূরে আমাদের থাকার জায়গাটায় যেখানে ট্র্যাপ পেতেছিলাম সকালে তার ছোট ছোট আলোগুলো একটা সারিতে যেন দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা ক্রমশ এগিয়ে চলেছি তার দিকে। অবর্ণনীয় মুহূর্ত !
৫ই নভেম্বর
সকাল সকাল উঠে হাত-মুখ ধুয়ে ক্যামেরা টা নিয়ে চড়তে বেরোলাম। দেখি ঐশী ও বেড়িয়ে পড়েছে। মোটামুটি যত সকালেই আমি বেরোই না কেন ঐশী কে বাইরে পাব এটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। বড় বড় ঘাসের ঝোপে ক্যামেরা-বন্দি হল এক ঝাঁক মুনিয়া।
 |
সকালে চাঁদবালিতে মুনিয়ার ঝাঁক |
প্রাতঃভ্রমন সেরে যখন ঘরে ফিরলাম বাকিদের মোটামুটি স্নান করে রেডি হওয়া হয়ে গেছে। পিট ফল সাম্পেল কালেক্ট করে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আমাদের বানানো ডিপার্টমেনটাল টিশার্ট টা পরে নিলাম। এদিকে আমাদের চাঁদবালির গল্প আপাতত সেদিন ই শেষ। রাতে থাকা দাংমালে। তাই তাড়াহুড়ো করে সব গুছিয়ে নিতে হল। টুর-গাইড রা বলে দিল যে ওখানে বিদ্যুতের সমস্যা হতে পাড়ে। তাই আমরা যেন মোবাইল ফুল চার্জ দিয়ে রাখি। মোবাইল চার্জ-টারজ দিয়ে বাড়িতে জানিয়ে দিলাম। শুনলাম বাবা অনেকটা ভালো আছে। দাংমাল নিয়ে আমাদের আগ্রহ আরও খানিক টা বাড়িয়ে দিল সাপের গল্প। জায়গাটায় নাকি সাপের বেশ উপদ্রব আছে। বিশেষ করে কালাচের। এছাড়া গোটা ভিতরকনিকা জুড়েই রয়েছে কিং কোবরা থেকে শুরু করে আরও নানা সব বিষাক্ত সাপের আস্তানা। এখনো পর্যন্ত আমাদের জার্নি ছিল অনবদ্য। দাংমালের গল্প আমাদের এই ট্রিপ টাকে যেন খানিক অ্যাডভেনচরাস করে তুললো। যা হোক, এরপর আবার সেদিনের মতো লঞ্চে করে যাত্রা শুরু হল। নদী-উপশাখা সরু হয়ে বয়ে চলেছে ন্যাশনাল পার্কের ভেতর দিয়ে আনাচে-কানাচে। অজস্র কুমির কে বাস্কিংরত অবস্থায় দেখা গেল নদীর ধারের ম্যানগ্রোভের কাদামাটিতে। এখানে "জয়-তারা"র কথা না বললে অন্যায় হবে। শুরু হয়েছিল মজার ছলেই। কিন্তু পরবর্তীতে সংস্কার টা এতোটাই প্রভাব ফেলেছিল যে কে পি স্যার ও ড্রাই-টাইমে বাজাতে বলছিলেন যদি ভালো কিছুর দেখা মেলে এই আশায়। মিললো ও। একটা রক পাইথন কে বনকর্মীরা পাশের জঙ্গলে রিলিজ করছিল। ঘটনাক্রমে আমাদের দেখা হয়ে গেল। এরপর একে একে পেইনটেড সটঅর্ক থেকে শুরু করে অ্যাডজুট্যানট সটঅর্ক দেখা মিলল সবার ই। পায়েড কিংফিশার তো আগেই দেখেছিলাম। এছাড়া রুডি থেকে ক্যাপ্ড্ আর শেষ দিনে কলারড্ সব কিংফিশার ই দেখা হয়ে গেছিল এ যাত্রায়। দাংমালের যাত্রা পথেও আমরা কোথাও একটা নেমেছিলাম, নামটা এখন আর মনে নেই। একটা ওয়াচ-টাওয়ার ছিল সম্ভবত। চারপাশে বিস্তৃত গ্রাসল্যান্ড। তার ই মাঝে দেখা মিললো আইবিস্ এর। কিছুটা দূরে একটা পারপেল হেরন স্পটেড হলো। ওয়াচ-টাওয়ার থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ আমরা সবাই হাঁটলাম। এদিকটায় কিন্তু গ্রাসল্যান্ডের বিন্দু-মাত্র আভাস নেই। রয়েছে ম্যানগ্রোভ এর বড় বড় গাছ। আর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সরু মাটির পথ। আমরা কয়েকটা গ্রউপ এ ভাগ হয়ে গেছি। একটা স্টিলট আর ইয়েলো-অরেঞ্জ টিপ কে ক্যামেরা-বন্দি করে ফিরছি দেখি হৈ-হৈ। দ্বৈপায়নরা কিং কোবরা দেখেছে। ওর ক্যামেরায় ছবিও দেখলাম। জল থেকে মাথা তুলে যেন নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
 |
বাস্কিং ক্রোক |
 |
রক পাইথন এর সাক্ষাত |
 |
একটু জিরিয়ে নেওয়াঃ প্রিয়াঙ্কা, মেখলা, অর্ণব |
 |
আইবিস সাইটেড ! |
 |
ফরেস্ট ট্রেল |
 |
আমরা তো রাজ-অতিথি মাত্রঃ সামনে স্বয়ং রাজা |
অনেকটা পথ আসা হয়ে গেছে। এবার ফিরতে হবে। লঞ্চে যখন উঠলাম তখন প্রায় বিকেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে-আগে লঞ্চ একটা ঘাটে এসে থামল। ভাঁটায় তখন জলস্তর অনেকটা নীচে। কাঠের পাটাতন বেয়ে ওপরে উঠলাম সবাই। যার যার মাল-পত্র নিয়ে নিতে বলল। বুঝলাম সেদিনকার মতো যাত্রা পথের ইতি হয়েছে। মনে আছে একটা ভ্যান দাঁড় করানো ছিল। আমরা সবাই ওতে মাল বোঝাই করে দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। সরু পথ। দুপাশে জঙ্গল। আলো কমে এসেছে। পথ ও অনেকটাই। প্রায় আড়াই-তিন কিমি পথ শেষে আমরা পৌঁছলাম দাংমাল ফরেস্ট লজ।
চাঁদবালিতে আমাদের প্রথম পর্বের রাতে যদি কিছু সারপ্রাইস থেকে থাকে তবে তা কোনো অংশে কম ছিলনা দাংমালেও। লজ এর চারপাশ টা সবটাই জঙ্গলে ঘেরা। ন্যাশনাল পার্কে কোর এরিয়ায় থাকার অনুমতি সাধারনত থাকে না। কিন্তু আমাদের থাকার জায়গাটা যেন কোর এরিয়ার মধ্যেই ছিল। চারপাশে শুধুই ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। আমাদের থাকার ঘরের সামনে একটা বারান্দা মতো ছিল। আর তার সামনে টা তার এর জালি দিয়ে ঘেরা। রাতে ওখানে বসে আমরা হরিণ এর পাল যেতে দেখেছি। দাংমালে ইলেকট্রিসিটির অনেক সমস্যার কথা শুনেছিলাম বটে। কিন্তু ওখানে আমাদের ইলেকট্রিসিটি থেকে জল কোন কিছুর ই অসুবিধা হয়নি। শোয়ার বন্দ্যোবস্ত ও ছিল অসাধারন। বড় ঘর। চারপাশে চারটে সিঙ্গল খাট। ঘরের পেছন দিকটায় ছিল বাথরুম। বাথরুম এর পাশে একটা বড় জানলা ছিল। পেছন দিকটায় পুরোটাই ছিল জঙ্গল। রাতে আমরা সেই পেছনের জানলা দিয়ে কিছু বুনো শুয়োরের চলা ফেরার আভাস পেয়েছিলাম। যদিও তাদের দেখা পাইনি। ঘরে ঢুকে দেখলাম দরজার পেছনে সাপের সতর্কীকরন করা আছে। ভালো করে বিছানা, বালিশ, খাটের তলা টর্চ দিয়ে চেক করে একে একে সবাই স্নান সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে সবে ঘটনাগুলোর একে একে রোমন্থন শুরু করেছি। এমনি সময়ে দরজায় কড়া পড়ার শব্দ। অরুনাভ বলে উঠল "কালাচ হলে দরজা খুলছি না।" দরজা খুলতে দেখি দ্বৈপায়ন, শেখর, বিপ্লব রা হাজির। ডিনার এর ডাক পড়েছে। ডিনার এর ঘরটা আমাদের থাকার ঘরের থেকে কিছুটা দূরে। খাবারের আয়োজন বেশ ভালই ছিল। খেয়ে দেয়ে হাত মুখ ধুয়ে বেড়িয়েছি। ঘরের পেছন দিকটায় বেশ কিছুটা ফাঁকা মতো জায়গা। আর একটু দূরেই বড় বড় গাছ এর ঝোপ। সেই ঝোপে বেশ কিছু ক্ষণ ধরেই খস্ খস্ শব্দের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। এরপর হঠাৎ ই বেড়িয়ে এলো বেশ কয়েকটা বুনো শুয়োর। সাইজ এ খুব একটা বড় ছিলনা। কোন রকম শব্দ না করে আমরা ওদের চলা ফেরা লক্ষ্য করতে থাকলাম। এরপর ই মোটামুটি ১৫-২০ ফুট দূর দিয়ে দুটো হরিণ আস্তে আস্তে ঝোপের একপাশ থেকে বেড়িয়ে এসে হেঁটে কিছুটা দূরে আবার অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট বন্ধ রেখে যতটা ছবি তোলা যায় তুললাম। চারপাশের নিকষ অন্ধকারে হরিণ দুটো যখন হেঁটে যাচ্ছিল ওদের চোখ দুটো জ্বলছিল। একটার নীল আর একটার হলুদ। অপূর্ব সেই দৃশ্য ! প্রকৃতির এরকম অকৃত্রিম রুপ আগে গল্পে শোনা ছাড়া নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য আমাদের কারোর ই খুব একটা হয়নি। রাতে যখন নিজেদের ঘরে ফিরছি কুয়াশায় সামনের পথটা আবছা হয়ে আছে। দূরে দুটো হরিণের কালো অবয়ব দেখতে পেলাম। এক দৃষ্টে যেন আমাদের দেখছে। একটা বড় আরেকটা ছোট। মা হরিণ টা একটু এগিয়ে এসে যেন আমাদের পরখ করে নিল। ঘরে ফিরে আর গল্প করার মতো ইচ্ছে বা এনার্জি কোনটাই তখন আমাদের নেই। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই।
 |
দাংমালে ডিনারে ব্যস্ত আমরা |
 |
অপূর্ব দাংমাল ! |
৬ই নভেম্বর
ঘুম ভাঙল যখন ভোর হয়ে গেছে। বিছানায় শুয়েই মোটামুটি পাশের ঘরে শেখর, আবির দের সাথে মশকরা চলছে। একটু আলো ফুটতে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। দেখি কে পি স্যার ও বাইরে। আমাদের দেখে বলল "চল, আশপাশ টা একটু দেখে আসি।" সামনে স্যার, পেছনে গুতিকতক আমরা। একটা জায়গায় গিয়ে দেখলাম ছোট একটা সাঁকো মতো। সাঁকো বলা ভুল। দুটো বাঁশ পাশাপাশি বেঁধে বানানো। পা ফেললে জুতোর পুরো সোল টাও বোধ হয় কভার করবেনা। নীচ টা বেশ কিছুটা গভীর। পড়লে চোট তেমন গুরুতর না হলেও কাঁদা-মাটি মেখে টেখে যে একাকার অবস্থা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার ওপর হাতে আবার ক্যামেরা আছে। নিজের থেকেও তখন ক্যামেরা দামি। কে পি স্যার অনায়াসেই পেড়িয়ে গেলেন। অতঃপর আর পিছিয়ে আসার প্রশ্ন নেই। কোন রকমে এক-পা দু-পা করে পেরলাম আমিও। এরপর একে একে বাকিরা। সৌভাগ্যবশত কাওকে সেদিন নীচে পড়ে যেতে হয়নি।
সকালটায় হেঁটে হেঁটে সাইটিং ও কিন্তু মন্দ হল না। বাস্কিং ভ্যারানাস, আয়ওরা থেকে ক্রিমসন রোসের ছবি উঠল ক্যামেরায়। এরপর সকালের জল খাবার সেরে সবাই একে একে তৈরী হয়ে নিলাম দাংমাল কে বিদায় জানানোর জন্যে। এখানেই একটা কৃত্রিম জলাশয়ে অ্যালবিনো ক্রোকোডাইল "গোরি" রাখা আছে বলে শুনেছিলাম, যদিও আমার তা দেখা হয়ে ওঠেনি। দাংমালের শুরু টা যদি কালাচের গল্প দিয়ে হয়ে থাকে তবে শেষ টা হল মুখোমুখি একটা ট্রি স্নেক দিয়ে।
 |
বাস্কিং ভ্যারানাস |
 |
মর্নিং চ্যালেঞ্জ ! |
 |
দাংমালে প্রাতঃভ্রমন শেষেঃ দ্বৈ, শেখর, আমি ও কাশীদা |
 |
মুখোমুখি ট্রি স্নেক |
ম্যানগ্রোভ এর ভেতর দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হল শেষ গন্তব্যের দিকে। কোথায় যাচ্ছি তার নাম জানা তো দূর সেখানকার ন্যুনতম আভাস ও আমাদের কাছে ছিলনা। তবে সেই না জানাটাই বোধ হয় ভালো ছিল। আমাদের আবারো বলা হয়েছিল যেখানে যাচ্ছি সেখানে মোবাইল চার্জ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পাড়ে। এর সাথে উপরি যোগ হল যে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও নাকি ওখানে খুব একটা পাওয়া যাবেনা। এসবের মধ্যেই জায়গাটাকে কেন্দ্র করে একটা ভৌতিক পরিবেশের আবহ যেন তৈরি হল। মনে মনে ভাবলাম প্রকৃতির এতো কাছে এসে যদি ভুতের সাইটিং ও হয়ে যায় তা মন্দ কি ! ফলস্বরুপ, এরকম তাৎপর্যপূর্ণ একটা যাত্রার শেষ দিনেও উত্তেজনা টানটান বহাল থাকল। তবে আমরা কেউ নূন্যতম ও আঁচ করতে পারিনি যে সবথেকে বড় উপহার টা আমাদের জন্য তখন ও তোলা ছিল। যা হোক, আমাদের লঞ্চ-যাত্রা চলেছে। সাইটিং এর তালিকায় নতুন দের মধ্যে শ্যাঙ্ক আর অ্যাভোসেট যোগ হয়েছে। দুপুরে লাঞ্চ এর পর সবাই পালা করে করে এক রাউনড্ ঘুমিয়ে নিল। ক্লান্তি আর ইঞ্জিনের নিরন্তর শব্দে বোরডম কিছুটা গ্রাস করেছে তখন আমাদের। ডেক এ প্রবল রোদ থাকায় একটা সময় তো প্রায় সবাই নীচে চলে এসেছিলাম। ওপরে দ্বৈ, অন্তিমা, ঐশী আর এশা ছিল। রোদ পড়তেই আবার সবাই ডেক এ গিয়ে বসলাম। বিকেল হয়ে গেছে। নদীর হাওয়া যেন কয়েক গুন বেড়ে গেছে। আর সেই হাওয়ায় আবার সবাই নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠলাম . . . "লাগিয়ে পালে তোমার খোলা হাওয়া"।
 |
বলছি কেমন লাগছে ভাই? বিপ্লব ও আমি |
 |
বাঙ্গালীর ভাত-ঘুম ! |
 |
রোদ পড়ায় সবাই তখন ডেকে |
 |
আমরা ! |
দূরে হঠাৎ ই মনে হল একটা ঘাট দেখা যাচ্ছে ! ইঞ্জিনের আওয়াজ আস্তে আস্তে বন্ধ হল। জলের স্রোতে ভেসে চললাম আমরা। লঞ্চ নোঙ্গর করল। পৌঁছলাম হাবালিকাঠি।
শুরু টা খানিক ভৌতিক ই ছিল বটে। ম্যানগ্রোভ এর পরিচিতি মাটির সরু পথ। দুপাশে ঘন জঙ্গল। কিন্তু এখানে মূল প্রতিকূলতা টা হল রাস্তা টা একে ছিল অসম্ভব সরু তার ওপর জলে ভিজে পিছলে। গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হল রাস্তার দুপাশেই কাঁদা। প্রতিটা স্টেপ অত্যন্ত সন্তর্পণে ফেলতে হচ্ছে। একটু অসতর্ক হলেই পিছলে যাবে। আমি আর দ্বৈ সামনেটায় ছিলাম। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার পড়ে যেতে যেতে ও আমায় ধরে ফেলেছে। পরে শুনেছিলাম পেছনের দিকে মেখলা ক্যামেরা নিয়ে কাদায় পড়ে গেছিল। এহেন অবস্থায় পিঠে রাক্স্যাক নিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে হাঁটতে আমাদের সবার ই তখন নাজেহাল অবস্থা। মোবাইল বের করে দেখলাম ভোডাফোনে টাওয়ার নেই। বি এস্ এন্ এলের অবস্থাও তথৈবচ। শেষের দিকটায় এসে রাস্তার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল অবশ্য। হঠাৎ ই দেখতে পেলাম আমাদের সরু পথ টা আর কিছু দূর গিয়ে শেষ হয়েছে। আর সেখানে কিছু ঘর বাড়ির মতো দেখা যাচ্ছে। দেখে আশ্বস্ত হলাম যে অবশেষে এই ভয়ানক পথের তবে শেষ হতে চলেছে। আরও কিছু দূর এগোতেই . . . "ওটা কিসের শব্দ?" আমার কাছে খুব একটা পরিচিত নয় শব্দটা। কিন্তু বাকিদের কাছে তো পরিচিতি। আমার বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেছিল। ওই পিচ্ছিল, ঘর্মাক্ত, কাঁদায় ভরা পথ টার শেষে যে একটা সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে আমরা কেউ-ই স্বপ্নেও তা ভাবতে পারিনি। ভাবতে অবাক লাগলেও প্রায় একুশ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে ওটাই আমার জীবনের প্রথম সমুদ্র দেখা। ওই অনুভুতি বর্ণনা করার নয়। তাই তার ব্যর্থ চেষ্টাও আমি করবোনা। সামনে অনন্ত, অসীম সাগরের জল আর তার সামনে নিজের অস্তিত্ব নগন্য।
 |
উপসংহার ! |
চাঁদ উঠেছে। আজ পূর্ণিমা। জোয়ারের টানে সমুদ্র ফুলে- ফেঁপে উঠেছে তখন। সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে একটা জিনিস আমি অনুভব করেছিলাম। আমাদের বন্ধুত্বের বৃত্তটা সম্ভবত সেদিন সম্পূর্ণ হয়েছিল। বিগত তিন বছরের অনেক ভুল, ঠিক, হাসি, কান্না, পাওয়া, না পাওয়া, ভুল বোঝা আর সব ভুলে একসাথে পথ চলা, এই সব কিছুই পূর্ণিমার আলোয় ভেসে যাওয়া হাবালিকাঠির সেই সমুদ্রের তীরে এসে শেষ হয়েছিল।
"তোমার অসীমে প্রাণ-মন লয়ে যতদূরে আমি ধাই। কোথাও দুঃখ কোথাও মৃত্যু কোথা বিচ্ছেদ নাই।"
শুরুর গল্প ।। ছবি- অনির্বাণ রায়।
অনির্বাণ
১২ ই আগস্ট, ২০১৯।